ঢাকা    ,
Breaking News: বিএনপি’র মনোনয়ন ,৬৩ আসন নিয়ে কৌতূহল বসুরহাট–মাইজদী রুটে বাস চাই ! জনদুর্ভোগে ফুঁসে উঠছে কোম্পানীগঞ্জবাসী। কোম্পানিগঞ্জে পল্লী বিদ্যুতের সেবার নামে ভোগান্তিঃ বেগমগঞ্জে ভেঙ্গে পড়া ব্রিজ দিয়ে চলাচল ঝুঁকিপূর্ন এম জি বাবর (নোয়াখালী) প্রতিনিধিঃ ।।গণতন্ত্র না প্রহসন: বাংলাদেশের ৫৪ বছরের রাষ্ট্র ব্যবস্থার বাস্তব চিত্র ও ইসলামী শাসন বিকল্প ভাবনা।। “নদীর কান্না, মানুষের ব্যথা — চরপার্বতীর অন্তহীন সংগ্রাম” নোয়াখালীর আলোচিত আসন-৫ (কোম্পানীগঞ্জ-কবিরহাট) বিএনপির প্রার্থী "আলহাজ্ব ফখরুল ইসলাম" — কর্মী মহলে আনন্দের জোয়ার। খুলনায় বিএনপি নেতার অফিসে বোমা হামলা-গুলিতে মাদ্রাসা শিক্ষক নিহত, আহত ৩ জনগণ বিচার করবে ১৪ বছরে আ. লীগ কী দিয়েছে : প্রধানমন্ত্রী সুস্থ থাকতে নিশ্বাসের কোন ব্যায়ামগুলো করতে পারেন

।।গণতন্ত্র না প্রহসন: বাংলাদেশের ৫৪ বছরের রাষ্ট্র ব্যবস্থার বাস্তব চিত্র ও ইসলামী শাসন বিকল্প ভাবনা।।

।।গণতন্ত্র না প্রহসন: বাংলাদেশের ৫৪ বছরের রাষ্ট্র ব্যবস্থার বাস্তব চিত্র ও ইসলামী শাসন বিকল্প ভাবনা।।

মোঃ আল এমরান :

নামেই গণতন্ত্র, বাস্তবে দলতন্ত্র বাংলাদেশ একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র, যার সংবিধান বলে “প্রজাতন্ত্রের মালিক জনগণ।” কিন্তু বাস্তবতা প্রশ্ন তোলে,এই প্রজাতন্ত্রের মালিক আসলে কে? জনগণ, নাকি একদল রাজনৈতিক অভিজাত শ্রেণি, যারা ক্ষমতার রশি টানাটানিতে দেশকে ব্যবহার করছে নিজেদের স্বার্থরক্ষার ঢাল হিসেবে?দুঃখজনক হলেও সত্য, দেশের প্রায় জনতা আজও বোঝে না গণতন্ত্রের প্রকৃত অর্থ। তাদের কাছে গণতন্ত্র মানে কেবল পাঁচ বছর পর ভোট দেওয়া,কেন দেয়? কাকে দেয়? ফলাফল তাদের জীবনে কী পরিবর্তন আনে? তা নিয়ে তারা ভাবেই না।সংবিধানে লেখা আছে জনগণের অধিকার, কিন্তু সেই অধিকার বাস্তবে কাগজেই বন্দি। রাষ্ট্রের আইন-কানুন, প্রশাসনিক ব্যবস্থা, অর্থনীতি ও বিচার ব্যবস্থা,সবকিছু যেন সাজানো মঞ্চ, যেখানে অভিনয় করেন রাজনীতিক ও আমলারা, আর দর্শক থাকে জনগণ।গণতন্ত্র তত্ত্বে দেশ জনতার, বাস্তবে

ক্ষমতাধরদের,তাত্ত্বিকভাবে গণতন্ত্র মানে জনগণের শাসন, জনগণের দ্বারা, জনগণের জন্য। কিন্তু বাংলাদেশের বাস্তবতা একেবারেই উল্টো। এখানে গণতন্ত্র পরিণত হয়েছে দলতন্ত্রে, আর দলতন্ত্র রূপ নিয়েছে একনায়কতন্ত্রে।যে দল ক্ষমতায় আসে, সে-ই রাষ্ট্রের মালিক বনে যায়। প্রশাসন, বিচারব্যবস্থা, নির্বাচন কমিশন,সব প্রতিষ্ঠান ধীরে ধীরে দলীয় নিয়ন্ত্রণে চলে যায়। ন্যায়বিচার তখন আর ন্যায় থাকে না, বরং হয় ক্ষমতার অনুমোদিত সত্য।গত ৫৪ বছরে আমরা দেখেছি,শাসক বদলেছে, কিন্তু শাসনব্যবস্থা বদলায়নি। জনগণের ভাগ্যে পরিবর্তন আসেনি, বরং ধনীরা হয়েছে আরও ধনী, আর গরিবরা হয়েছে আরও প্রান্তিক।জনগণের অন্ধ আনুগত্য,রাজনৈতিক সচেতনতার ঘাটতি,রাজনীতির আসল শক্তি হওয়া উচিত সচেতন জনগণ। কিন্তু আমাদের সমাজে দেখা যায় তার উল্টো চিত্র।মানুষ এখন দল বা নেতার প্রতি এমনভাবে অনুগত যে, ন্যায়-অন্যায়, সত্য-মিথ্যা সবকিছুই বিচার করে দলীয় চশমায়। এর ফলে গণতন্ত্রে জন্ম নিয়েছে, অন্ধ আনুগত্যের সংস্কৃতি, যা গণতন্ত্রের মূল আত্মাকে হত্যা করছে।একজন প্রকৃত নাগরিককে প্রশ্ন করতে শেখানো দরকার, কেন? কিন্তু আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা ও রাজনৈতিক সংস্কৃতি নাগরিককে শেখাচ্ছে,যা বলা হয়, তা-ই সত্য। এই মানসিকতা থেকে মুক্ত না হলে গণতন্ত্র কখনও জনগণের হাতে ফিরবে না। ইসলামী দৃষ্টিতে শাসনব্যবস্থা,আমানত ও জবাবদিহির রাজনীতি ইসলাম রাষ্ট্র ও শাসনব্যবস্থাকে দেখে আমানত হিসেবে, যা আল্লাহর কাছে জবাবদিহিমূলক।

কুরআনে আল্লাহ বলেন, “নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের আদেশ দেন, তোমরা আমানত তাদের হাতে দাও, যারা এর যোগ্য।(সূরা আন-নিসা ৪:৫৮) খেলাফত ব্যবস্থায় শাসকের কাজ ক্ষমতা ভোগ নয়, বরং জনগণের সেবা ও ন্যায়ের নিশ্চয়তা প্রদান। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেনঃ “তোমাদের প্রত্যেকেই একজন রাখাল, এবং প্রত্যেকেই তার দায়িত্বের জন্য জবাবদিহি করবে।” (সহিহ বুখারি)

ইসলামী রাজনীতিতে ক্ষমতা কোনো পুরস্কার নয়, বরং দায়িত্ব ও ভয়াবহ জবাবদিহির ক্ষেত্র।

অন্যদিকে বর্তমান গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় ক্ষমতা মানে অর্থ, প্রভাব ও পারিবারিক উত্তরাধিকার। ফলে রাজনীতি পরিণত হয়েছে বাণিজ্যে, যেখানে দলীয়

টিকিট মানেই ব্যবসার মূলধন।রাষ্ট্রব্যবস্থার বৈশ্বিক তুলনা,বিশ্বে বর্তমানে কয়েকটি সফল রাষ্ট্রব্যবস্থা রয়েছে, যেগুলোর মডেল বিশ্লেষণ করলে বোঝা যায়—

গণতন্ত্র টিকে থাকে কেবল তখনই, যখন জবাবদিহি ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত হয়।১. যুক্তরাজ্য - সাংবিধানিক রাজতন্ত্র, কিন্তু প্রশাসন ও বিচারব্যবস্থা সম্পূর্ণ স্বাধীন। প্রধানমন্ত্রীও আদালতের রায়ের ঊর্ধ্বে নন।২.যুক্তরাষ্ট্র প্রেসিডেন্ট শাসিত ফেডারেল রাষ্ট্র; যেখানে তিনটি অঙ্গ (আইন, নির্বাহী, বিচার) একে অপরের ওপর নিয়ন্ত্রণ রাখে।৩.সিঙ্গাপুর – একদলীয় শাসন হলেও দুর্নীতির প্রতি শূন্য সহনশীলতা ও কঠোর প্রশাসনিক কাঠামো দেশটিকে উন্নত করেছে।৪.সৌদি আরব – ইসলামী রাজতন্ত্র; যেখানে শরিয়াহ আইন রাষ্ট্রীয় সিদ্ধান্তের মূলে। শাসক ও জনগণের সম্পর্ক দাসত্ব নয়, বরং দায়িত্বের বন্ধন।তুলনামূলকভাবে দেখা যায়—বাংলাদেশের গণতন্ত্র কেবল ভোটনির্ভর, যেখানে নীতি, ন্যায়বিচার ও নাগরিক অংশগ্রহণের জায়গা ক্রমেই সঙ্কুচিত।২৪ গণঅভ্যুত্থানের পরও বিবেকের জাগরণ হয়নি,বাংলাদেশে প্রতি রাজনৈতিক আন্দোলনের পরই আমরা ভেবেছি—এবার পরিবর্তন আসবে। কিন্তু ইতিহাস বলছে, প্রতিটি পরিবর্তনের পর পুরোনো কাঠামোই ফিরে এসেছে নতুন নামে।

২৪ গণঅভ্যুত্থানের পরও রাজনৈতিক দলগুলো নিজেদের ক্ষমতা রক্ষায় বেশি ব্যস্ত, জনগণের

অধিকার রক্ষায় নয়।জনগণের রক্তে রচিত এই পরিবর্তনগুলো আজ শুধুই ইতিহাসের পাতায়, বাস্তবে তার প্রতিফলন নেই।আজকের তরুণ প্রজন্ম বিভ্রান্ত—কাকে বিশ্বাস করবে? কোন দল দেশকে নিরাপদ

রাখতে পারবে?রাজনীতি এখন এমন জায়গায় পৌঁছেছে, যেখানে “সত্য বলা” মানে “বিরোধী হওয়া।”

রাষ্ট্রের বর্তমান সংকট: নৈতিকতার অবক্ষয়

আজকের বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় সমস্যা নৈতিকতার ঘাটতি।রাজনীতি, প্রশাসন, বিচার, শিক্ষা,সব ক্ষেত্রেই সততার সংকট প্রকট।

আমাদের সংবিধান বলে নাগরিকের অধিকার সুরক্ষিত, কিন্তু বাস্তবে আইন ধনীর পক্ষে, গরিবের বিপক্ষে।মধ্যবিত্তরা ভয় পায় সম্পদ বিনিয়োগে, কারণ ভূমি, ব্যাংক, বা ব্যবসা—সবখানে জটিলতা ও সালিশ-বাণিজ্য।ব্যাংকের টাকা সাধারণ মানুষ সঞ্চয় করে, আর রাজনৈতিক নেতারা বিদেশে পাচার করে।

যে রাষ্ট্রে “চোর ধরতে পুলিশ চোরের সহযোগী হয়”, সেখানে উন্নয়ন হয় পরিসংখ্যানের কাগজে, বাস্তবে নয়।সমাধান: সংস্কার, জবাবদিহি ও নৈতিক বিপ্লব

বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা থেকে বের হতে হলে রাষ্ট্রীয় পুনর্গঠন প্রয়োজন।এটি শুধু রাজনৈতিক নয়, নৈতিক সংস্কারও হতে হবে।১. সংবিধান সংস্কার: জনগণের জন্য, দলের জন্য নয়

সংবিধান এমন হতে হবে যাতে রাষ্ট্রের মূল নীতি হয় জনগণের কল্যাণ, ইসলামি ন্যায়নীতি ও নৈতিক জবাবদিহি।২. প্রশাসনে জবাবদিহি প্রতিটি জনপ্রতিনিধি ও আমলার সম্পদ ঘোষণাপত্র প্রকাশ বাধ্যতামূলক করতে হবে।দুর্নীতির জন্য দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে—রাজনৈতিক পরিচয় নির্বিশেষে।৩. রাজনৈতিক দলের সংস্কার যে দলের তহবিল অস্বচ্ছ, যাদের নেতারা দুর্নীতিতে জড়িত, তাদের নিবন্ধন বাতিল করতে হবে।দলীয় রাজনীতি থেকে পারিবারিক উত্তরাধিকার বন্ধ করতে হবে।৪. শিক্ষা ব্যবস্থায় নাগরিক সচেতনতা,বিদ্যালয় পর্যায় থেকে “সংবিধান, নাগরিক অধিকার, রাষ্ট্রনীতি” বাধ্যতামূলক পাঠ্য হিসেবে যুক্ত করতে হবে।

কারণ রাজনৈতিক সংস্কৃতি পরিবর্তনের শুরু হয় শিক্ষা থেকেই।৫. ইসলামি ন্যায়নীতি প্রশাসনের ভিত্তি হিসেবে

ইসলামী রাজনীতির মূল তিনটি স্তম্ভ—ন্যায়, পরামর্শ (শুরা), ও জবাবদিহি—রাষ্ট্রীয় নীতিতে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।যেখানে শাসক নয়, ন্যায় হবে সর্বোচ্চ ক্ষমতাধর।

বর্জনীয়: যে পথে চললে ধ্বংস অনিবার্য

দলীয় কোটা ও রাজনৈতিক নিয়োগ প্রথা

রাজনীতিকে ব্যবসা বানানো ধর্মকে রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহার,প্রশাসনে পক্ষপাতমূলক পদোন্নতি ভবিষ্যতের দিকনির্দেশনা: ন্যায়ভিত্তিক রাষ্ট্রের স্বপ্ন, একটি উন্নত রাষ্ট্র শুধু অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে গড়ে ওঠে না, গড়ে ওঠে নৈতিকতা ও ন্যায়বিচারের ওপর।

বাংলাদেশ যদি সত্যিকার অর্থে জনগণের রাষ্ট্র হতে চায়, তবে তাকে নতুন করে শুরু করতে হবে—

আত্মসমালোচনা থেকে, ন্যায়বিচার থেকে, এবং আল্লাহভীতির রাজনীতি থেকে।গণতন্ত্র ভালো ব্যবস্থাপনা তখনই, যখন শাসক ও শাসিত উভয়ই নৈতিকতার দাস।কিন্তু যখন রাজনীতি হয় ব্যবসা, তখন দেশ হয় লুটপাটের ক্ষেত্র।তাই ইসলামি খেলাফতের ন্যায় জবাবদিহিমূলক রাষ্ট্রব্যবস্থা—যেখানে প্রতিটি সিদ্ধান্ত জনগণের কল্যাণে, আর প্রতিটি নেতা আমানতের রক্ষক—সেই মডেলই হতে পারে বাংলাদেশের ভবিষ্যতের পথপ্রদর্শক।পরিবর্তন চাই, কিন্তু ভেতর থেকে,বাংলাদেশের জনগণ আজ প্রশ্ন করছে—এই রাষ্ট্র কার জন্য?৫৪ বছর ধরে গণতন্ত্রের নামে প্রতারণা, ভোটের নামে ব্যবসা, উন্নয়নের নামে লুণ্ঠন চলছে।সময় এসেছে আত্ম সমালোচনার আমরা কি গণতন্ত্র চাই, না ন্যায়ভিত্তিক রাষ্ট্রব্যবস্থা? যদি রাজনীতি না ফেরে ন্যায়ের পথে, যদি শাসকরা না ফেরে জবাবদিহির পথে, তবে ভবিষ্যতেও বাংলাদেশ চলবে “একই নাটক, ভিন্ন চরিত্র”-এর গল্পে।

ইসলাম বলে—“যেমন জনগণ, তেমন শাসক।”

তাই পরিবর্তন শুরু করতে হবে আমাদের ভেতর থেকে,সচেতনতা, নৈতিকতা ও সত্যের প্রতি আনুগত্য থেকে।তবেই বাংলাদেশ হবে একটি প্রকৃত জনকল্যাণমূলক রাষ্ট্র,যেখানে গণতন্ত্র নয়, ন্যায়তন্ত্র হবে সর্বোচ্চ মূল্যবোধ।

Advertisement
লাইভ টিভী

লাইভ টিভি কনফিগার করা হয়নি

অ্যাডমিন প্যানেলে গিয়ে সেটিংস থেকে লাইভ টিভি সেটআপ করুন
পুরাতন সংবাদ